সমগ্র দেশের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রচন্ড তাপদাহে খুলনার অবস্থান উল্লেখযােগ্য। নিতান্ত প্রয়ােজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হতে চাইছে না। পরিবেশের এমন বিভৎসতাকে গুরুত্ব না দিয়ে তাপদাহকে জয় করে নিজেদের চিন্তা-ভাবনাকে বাস্তবে তুলে ধরতে খুলনার জিলা স্কুল ময়দানে বসেছিল ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের অংশগ্রহণে দু’দিনের বিজ্ঞান মেলা।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) খুলনা জিলা স্কুলের অডিটোরিয়ামে জেলা প্রশাসন আয়োজিত ৪৬তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের ২দিনব্যাপী বিজ্ঞান মেলার শেষ দিন। আর এই শেষ দিনে ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের আনন্দ-আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু ছিল পুরস্কার বিতরণকে ঘিরে।
মাত্র দু’দিনের এই মেলায় উদ্ভাবনের বহি:প্রকাশের প্রদর্শনী। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে কিছু ভিন্নগত কাল্পনিক চিন্তার সমষ্টিগত অদৃশ্য শক্তির কঠোর পরিশ্রমের বেশ কয়েক দিন।
খুলনা জিলা স্কুলের মাঠে ৪১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে স্কুলের এই ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা তাদের বিভিন্ন উদ্ভাবনী প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়েছে। দুর্ঘটনার প্রতিরোধ ও উদ্ধার ব্যবস্থা, বজ্রপাতে আগাম সতর্ক সংকেত, চুরির সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশের কাছে অটোমেটিক বার্তা পৌছানো, ট্রেন দুর্ঘটনা প্রতিরোধসহ অভূতপূর্ত সব উদ্ভাবন বিস্ময়ের সৃষ্টিতে নজরকাড়ে আয়ােজক ও আগত দর্শনার্থীদের।
অন্যতম আকর্ষণে পরিনত হয়েছে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর বাসের। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সাজানো বাসের ভেতরে ছিল মিনি থিয়েটার। যেখানে মহাকাশ ও বিজ্ঞানভিত্তিক ফোর-ডি সিনেমা ও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শণ করা হয়েছে। বাসে চড়ে আপন আগ্রহে শিক্ষার্থীরা জেনেছে বিজ্ঞান সম্পর্কে।
বিজ্ঞান ভিত্তিক প্রকল্প উপস্থাপন, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের সাথে কুইজ এবং সেমিনারের আয়োজন মেলায় করা হয়েছিল।
এসব ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের উৎসাহ-উদ্দীপনাকে কাজে লাগিয়ে দেশ আগামী দিনে আরো এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠােনের প্রধান অতিথি খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান বলেন, নিজস্ব প্রযুক্তি ছাড়া কোন দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। উন্নত রাষ্ট্র গঠনে বিজ্ঞান চর্চার বিকল্প নেই। যে জাতি বিজ্ঞানে যত বেশি উন্নত সে জাতি তত বেশি শক্তিশালী। আগামী প্রজন্মকে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হতে হবে।
তিনি এসব ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের কাজের প্রশংসার মাধ্যমে তাদের যথাযথ সার্বিক তত্বাবধায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে এই মেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মনে করেন। প্রযুক্তির যে অভুতপূর্ব পরিবর্তন হয়েছে তার অবদান হলো বিজ্ঞান। বিজ্ঞান মেলার প্রচার ও প্রসারে সংশ্লিষ্ট সকলকে আহবান জানান তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন খুলনা জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম ও খুলনা গেজেটের যুগ্ম সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক শেখ দিদারুল আলম।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছের সভাপতিত্বে সঞ্চালনায় ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার জান্নাতুল নাইম ও রেজোয়ানুল রশিদ।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় খুলনা জেলা প্রশাসন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহের এবারের প্রতিপাদ্য ‘জ্ঞান-বিজ্ঞানে করবো জয়, সেরা হবো বিশ্বময়’।
দুই দিনব্যাপী বিজ্ঞান মেলায় বিজ্ঞানভিত্তিক প্রকল্প উপস্থাপন, বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, কুইজ ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়। মেলায় খুলনা জেলার ৪৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কুইজ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ, অংশগ্রহণকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীদের মাঝে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদপত্র বিতরণ করেন।
খুলনা গেজেট/এএজে